দলিল সম্পাদন সংক্রান্ত বিষয়, দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রেশন

দলিল সম্পাদন কি

সাধারণ ভাষায় বলা যায় যে, দলিল দাতা বা বিক্রেতা স্বাক্ষর বা টিপসহি প্রদান করা। জমির দাতা বা বিক্রেতা যে তারিখে এবং সময়ে দলিলে স্বাক্ষর করবে সেই তারিখ এবং সময় থেকে দলিল সম্পাদিত হবে। উইল ছাড়া অন্যান্য সকল দলিল সম্পাদন করার তারিখ থেকে চার মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রি করার জন্য রেজিস্ট্রি অফিসারের নিকট উপস্থাপন করতে হবে। তবে চার মাস সময় পার হয়ে গেলে সেই সম্পাদিত দলিল রেজিস্ট্রি করার জন্য গ্রহণ যোগ্য হবে না।

তবে ১৯০৮ সালের রেজিস্ট্রি এক্টর এর ২৩ ধারা মতে আরও উল্লেখ্য যে, ঐ জমির সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যদি কোনো আদালতের কোনাে রায় বা ডিক্রি বা আদেশ থাকে এবং সেই রায় বা ডিক্রি বা আদেশের বিরুদ্ধে কোনাে আপিল করা হয় তাহলে সেই আপিল মোকদ্দমা নিষ্পত্তি হওয়ার চার মাসের মধ্যে দলিল রেজিস্ট্রি জন্য রেজিস্ট্রি অফিসারের নিকট দাখিল করতে হবে।

দলিল সম্পাদন সংক্রান্ত অধিকার

দলিল সম্পাদন করার মাধ্যমে জমি ক্রয় করার অধিকার রয়েছে। 

দলিল সম্পাদন করার তারিখ থেকে রেজিস্ট্রি করার জন্য চার মাস সময় পাওয়ার অধিকার রয়েছে। 

জমি ক্রয় করার সময় বা আগে, পূর্বের মালিকের নিকট থেকে জমির কাগজপত্র দেখার অধিকার রয়েছে।

দলিল সম্পাদন লঙ্ঘন  

দলিল সম্পাদন করার পর, সেই দলিল রেজিস্ট্রি না করা বা রেজিস্ট্রি জন্য সময় না পাওয়া একটি দলিল সম্পাদন লঙ্ঘন করার অপরাধ। জমি ক্রয় করার আগে বা ক্রয়ের সময় জমির কাগজপত্র দেখতে না দেওয়া বা ভূল কাগজপত্র দেখানো দলিল সম্পাদন লঙ্ঘন করার আওতাভূক্ত। 

দলিল সম্পাদন সংক্রান্ত প্রতিকার 

দলিল সম্পাদন করার বিষয়ে যে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে জমি দলিল সহ অবশ্যই রেজিস্ট্রি অফিসে যেতে হবে।

এটি পড়ুনঃ   পুরাতন দলিল বের করুন খুব সহজে নিজের মোবাইল দিয়ে

জমির ক্রেতা ও বিক্রেতার যা জানা দরকার  

রেজিস্ট্রি আইন সংশোধনী ২০০৫ অনুযায়ী জমির ক্রেতা ও বিক্রেতার জানা দরকার যে, দলিল সম্পাদনা করার জন্য বিক্রেতা এবং ক্রেতা উভয় কে দলিল করার সময় উপস্থিত থেকে দলিল সম্পাদন কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে। কারণ  দেশের বাহিরে বা বিদেশে থেকে বা অপ্রাপ্ত-বয়ষ্ক ছেলে মেয়েদের নামে জমি কেনা সম্ভব নয়। জমি বিক্রয় করার জন্য  জমি বিক্রেতা উপযুক্ত মালিকানা কি না তা প্রমাণের জন্য জমির আগের বিক্রেতা অথবা মালিকের কাগজপত্র প্রমাণ হিসেবে থাকতে হবে। জমিতে বিক্রেতার আইনানুগ মালিকানা আছে এই মর্মে একটি হলফনামা জমি রেজিস্ট্রি করার সময় জমির বিক্রেতাকে দাখিল করতে হবে।

এছাড়াও জমির ধরন, জমির দাম, জমির মানচিত্র এবং আশপাশের জমির বিবরণ ও জমির আঁকানো ছবি দেওয়া বাধ্যতামূলক। সর্বশেষ পঁচিশ বছর সেই জমিতে কার কার মালিকানা ছিলো তাহার বিবরণ সহ রেজিস্ট্রি সময় দাখিল করা বাধ্যতামূলক। জমির ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের ছবি সহ ছবির উপরে দুই পক্ষের স্বাক্ষর বা টিপসহি বাধ্যতামূলক। এর কারণে বেনামী কোনো সম্পত্তি কেনা বেচা করার সুযোগ থাকে না। কোনো ব্যাক্তি অন্য কোনো ব্যাক্তির নিকট থেকে জমি ক্রয় করার উদ্দেশ্যে বায়না-নামা করে থাকে তাহলে সেই বায়না-নামা টি এখন থেকে রেজিস্ট্রি করতে হবে। এক্ষেত্রে নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রি ফি বাবদ পাঁচশত টাকা দিতে হবে।

পাঁচ লাখ টাকা থেকে পঞ্চাশ লাখ টাকা জমির মূল্য হলে রেজিস্ট্রি ফি হবে এক হাজার টাকা। যদি জমির মূল্য পঞ্চাশ লাখ টাকার বেশি হয় তাহলে রেজিস্ট্রি ফি হবে দুই হাজার টাকা। আবার শরিয়া আইন অনুযায়ী স্বামী স্ত্রী, ভাই-বোন অথবা ছেলে মেয়েদের কে কোনো সম্পত্তি দেওয়া হয় তাহলে সম্পত্তির মূল্য যাই হোক না কেনো নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশন ফি হবে একশত টাকা। ১৯০৮ সালের রেজিস্ট্রি আইন সংশোধনের আগের শরিয়া আইন অনুযায়ী মৌখিক ভাবে যদি কোনো জমি কাউ কে দেওয়া হতো তা তখন বৈধ ছিলো। কিন্তু বর্তমান সংশোধনী আইনে বলা হয়েছে সকল প্রকার হস্তান্তর লিখিত এবং রেজিস্ট্রি হতে হবে। কারণ মৌখিক ভাবে হস্তান্তর করা কোনো জমির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার পাইবার জন্য আবেদন করা যাবে না।

এটি পড়ুনঃ   দানপত্র দলিল ও রেজিস্ট্রি খরচ | দানপত্র দলিলের খরচ

রেজিস্ট্রি সংশোধনী আইন কার্যকর হওয়ার আগে সম্পত্তি ক্রয়ের চুক্তির সম্পাদন করার তিন বছর পর্যন্ত কার্যকর ছিলো। কিন্তু বর্তমান সময়ে তা এক বছর সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। আরও উল্লেখ্য থাকে যে, উভয় পক্ষের চুক্তি কার্যকরী হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় যদি চুক্তিতে উল্লেখ করা থাকে, তাহলে চুক্তি অনুযায়ী সময় কার্যকর হবে। যদি চুক্তি তে সময় লিখা না থাকলে এক বছর পর্যন্ত রেজিস্ট্রি সংশোধনো মেয়াদ থাকবে।

তবে আরও উল্লেখ্য যে, সমস্ত জমি বিক্রি করার জন্য বায়না চুক্তি এখন পর্যন্ত যদি রেজিস্ট্রি করা না হয়। তাহলে এই আইন বলবত হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রির জন্য বিক্রির সব প্রমাণ সহ উপস্থিত হতে বলা হয়েছে।  তা না হলে নির্ধারিত সময়ের পর সেই জমি বিক্রয় চুক্তি বাতিল বলে গন্য করা হবে। যদি কোনো জমি কোনো ব্যাক্তির নিকট বন্ধক থাকে, তাহলে যার কাছে জমি বন্ধক আছে। তাহার লিখিত অনুমতি ছাড়া অন্য কারোর কাছে বন্ধক রাখা অথবা বিক্রয় করা যাবে না। বিক্রি করলে সে টি বাতিল বলে গণ্য হবে।

WhatsApp Group Join Now
Joe Smith

Hi, I am Joe Smith. I love to share my thoughts on my website, loves to write on various topics according to the trends.

Leave a Comment

Home
Join
Facebook
Search
হারানো Gp সিম বন্ধ করার উপায়, সহজ পদ্ধতি জেনে নিন মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া এবং দিলে করণীয় কী? জানুন স্টোরি থেকে