পর্ণোগ্রাফি অপরাধের শাস্তিঃ বাংলাদেশের পর্ণোগ্রাফি আইন অনুযায়ী পর্নোগ্রাফি সংরক্ষণ বা বাজারজাত করণ নিষিদ্ধ বা আইনত একটি অপরাধ। যদি কোনো ব্যাক্তি পর্নোগ্রাফি উৎপাদন করে বা সংরক্ষণ করে বা বাজারজাত করণ বা বহন করে বা সরবরাহ বা ক্রয় -বিক্রয় অথবা ভিডিও ধারণ বা প্রদর্শন করে, তাহলে সেই ব্যাক্তির সেই কাজ টি একটি আইনত অপরাধ হইবে।
নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান, ক্লিক করুন:
পর্ণোগ্রাফি তল্লাশী বা জব্দ করার ক্ষমতা (পর্ণোগ্রাফি অপরাধের শাস্তি)
সরকারের নিকট হতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা সাব-ইন্সপেক্টর পুলিশ অথবা সমমানের উপযুক্ত ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষ এই আইনের অপরাধের সহিত জড়িত কোনো ব্যাক্তিকে ফৌজদারী কার্যবিধিতে বর্ণিত আইন অনুযায়ী তাৎক্ষণিক গ্রেফতার করতে বা পর্নোগ্রাফি সরঞ্জাম উদ্ধার বা জব্দ করার জন্য তল্লাশী করতে পারবেন।
এছাড়াও তল্লাশী করা কালে জব্দকৃত সফ্ট কপি বা হার্ড কপি, সিডি বা ভিসিডি অথবা ডিভিডি হতে পারে। কম্পিউটার বা অন্য কোনো ডিভাইস বা এক্সেসরিজ হতে পারে বা অন্য কোনো মাধ্যম বা প্রযুক্তি ব্যবহার করে। তাহলে সরকারি বা সরকারের নিকট থেকে লাইসেন্স প্রাপ্ত বা অনুমোদনপ্রাপ্ত অন্য কোনো উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের তল্লাশি করা কালে সংরক্ষিত তথ্য বা তদন্তকালে তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক প্রাপ্ত কোনো বিশেষ তথ্য বা প্রমাণ আদালতে সাক্ষ্য হিসাবে উপস্থাপন করতে পারবেন।
বিশেষজ্ঞদের মতামত সাক্ষ্য
পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন আইনের অধীনে সংঘটিত যে কোনো অপরাধ তদন্ত চলাকালীন উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সনদপ্রাপ্ত কারিগরী বিশেষজ্ঞ বা যে ধরনের কাজের দ্বারা অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সেই সকল বিষয়ে সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত বা আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কারিগরী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাক্তিগণের বা সরকারের নিকট থেকে লাইসেন্স বা অনুমোদনপ্রাপ্ত বেসরকারি কোনো ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কারিগরী দায়িত্বের থাকা উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে সনদপ্রাপ্ত ব্যাক্তিগণের নিকট থেকে প্রাপ্ত মতামত বিশেষজ্ঞদের মতামত হিসাবে গণ্য হবে এবং এই মতামত আদালতে সাক্ষ্য হিসাবে ব্যবহার করা হবে।
পর্নোগ্রাফি অপরাধের আমল যোগ্যতা
পর্ণোগ্রাফি আইনের অধীনে সংঘটিত সকল অপরাধ আমল যোগ্য এবং অ-জামিনযোগ্য অপরাধ।
পর্নোগ্রাফি অপরাধের বিচার পদ্ধতি
পর্ণোগ্রাফি আইনের অধীনে সংঘটিত সকল অপরাধের বিচার ফৌজদারী কার্যবিধি তে উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি অনুযায়ী হবে। তবে এই আইনে শর্ত থাকে যে, সরকার বা সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দিয়ে যে কোনো বিশেষ আদালত বা ট্রাইব্যুনাল এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধের বিচার করতে পারবে বা করার ক্ষমতা অর্পণ করতে পারবে।
পর্নোগ্রাফি আইনে আপিল
পর্ণোগ্রাফি আইনের অধীনে কোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত কোনো রায় বা আদেশে অমত পোষণ করে তবে সেই ব্যাক্তি উক্ত রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে, রায় বা আদেশ প্রদানের তারিখ থেকে ত্রিশ দিনের মধ্যে এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে আপিল করতে পারবেন।
পর্ণোগ্রাফি মিথ্যা মামলা বা অভিযোগ করার শাস্তি
পর্ণোগ্রাফি আইনের অধীনে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যাক্তি বা কর্মকর্তা বা কর্তৃপক্ষ অন্য কোনো ব্যাক্তির ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে পর্ণগ্রাফি আইনের কোনো ধারার অধীনে মামলা বা অভিযোগ করেন এবং ন্যায্য কোনো কারণ বা আইনানুগ কারণ নেই জানা স্বত্বেও মিথ্যা বা হয়রানি মূলক মামলা বা অভিযোগ করলে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ সালের ধারা ১৩ (১) মতে অপরাধ করেছে বলে গণ্য হবে এবং এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড হবে।
পড়ুনঃ মিথ্যা জিডি হলে করণীয় কি।
পর্ণোগ্রাফি আইনের অধীনে দায়েরকৃত কোনো মামলায় আদালত বা ট্রাইব্যুনাল শুনানি ও বিচারান্তে যদি কোনো অভিযুক্ত ব্যাক্তিকে খালাস প্রদান করেন এবং আদালত যদি এই মর্মে মতামত পোষণ করেন যে, অভিযুক্ত ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন ও হয়রানি মূলক, তাহলে মামলা দায়েরকারী বা অভিযোগকারী ব্যাক্তি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ সালের ধারা ১৩ (২) মতে অপরাধ করেছে বলে গণ্য হবে এবং এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড হবে।
পর্ণোগ্রাফি অপরাধের শাস্তি
যদি কোনো ব্যাক্তি পর্নোগ্রাফি উৎপাদন করে বা উৎপাদন করার জন্য অংশগ্রহণ করে বা কোনো নারী,পুরুষ বা শিশুকে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করলে বা কোনো নারী,পুরুষ বা শিশুকে কোনো প্রকার প্রলোভন দিয়ে অংশগ্রহণ করে তার জানা মতে বা অজান্তে স্থির চিত্র বা ভিডিও চিত্র বা চলচ্চিত্র ধারণ করে তাহলে সেই ব্যাক্তি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ সালের ধারা ৮ (১) মতে অপরাধ করেছে বলে গণ্য হবে এবং এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড হবে।
পড়ুনঃ বাল্যবিবাহ করার শাস্তি।
যদি কোনো ব্যাক্তি পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে অন্য কোনো ব্যাক্তির সামাজিক বা ব্যাক্তি সম্মান হানি করলে বা কোনো ভয়ভীতির মাধ্যমে অর্থ আদায় বা অন্য কোনো সুবিধা আদায় করার অথবা কোনো ব্যাক্তির জানা স্বত্বেও বা অজান্তে ধারণকৃত কোনো পর্নোগ্রাফির দ্বারা উক্ত ব্যাক্তিকে মানসিক নির্যাতন করলে সেই ব্যাক্তি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ সালের ধারা ৮ (২) মতে অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে এবং এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড হবে।
যদি কোনো ব্যাক্তি ইন্টারনেট বা ওয়েবসাইট অথবা মোবাইল ফোন বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি সরবরাহ করে তাহলে সেই ব্যাক্তি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ সালের ধারা ৮ (৩) মতে অপরাধ করেছে বলে গণ্য হবে এবং এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড হবে।
যদি কোনো ব্যাক্তি পর্নোগ্রাফি প্রদর্শনের মাধ্যমে লোকসমাগম সৃষ্টি করে, তাহলে সেই ব্যাক্তি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ সালের ধারা ৮ (৪) মতে অপরাধ করেছে বলে গণ্য হবে এবং এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড হবে।
যে কোনো ব্যাক্তি পর্নোগ্রাফি ক্রয়-বিক্রয়, ভাড়া, সরবরাহ, প্রকাশ্যে প্রদর্শন বা যে কোনো ভাবে প্রচার করলে বা যে কোনো উদ্দেশ্যে প্রস্তুত বা উৎপাদন, পরিবহন বা সংরক্ষণ করলে সেই ব্যাক্তি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ সালের ধারা ৮ (৫) (ক) মতে অপরাধ করেছে বলে গন্য হবে।
আবার কোনো ব্যাক্তি কোনো পর্নোগ্রাফি পাওয়া যায় এমন স্থান সম্পর্কে যে কোনো মাধ্যমে কোনো প্রকার বিজ্ঞাপন প্রচার করলে সেই ব্যাক্তি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ সালের ধারা ৮ (৫) (খ) মতে অপরাধ করেছে বলে গন্য হবে।
যদি কোনো ব্যাক্তি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ সালের ধারা ৮ (৫)(ক) (খ) অধীনে অপরাধে কোনো কাজ সংঘটনের উদ্যোগ গ্রহণ করিলে বা অপরাধ করলে এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং।এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড হবে।
যদি কোনো ব্যাক্তি কোনো শিশুকে ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফি উৎপাদন করে বা বিতরণ বা মুদ্রণ বা প্রকাশনা অথবা শিশু পর্নোগ্রাফি ক্রয়-বিক্রয়, সরবরাহ বা প্রদর্শন বা কোনো শিশু পর্নোগ্রাফি বিজ্ঞাপন প্রচার করে, তাহলে সেই ব্যাক্তি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ সালের ধারা ৮ (৬) মতে অপরাধ করেছে বলে গণ্য হবেনল এবং এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ দশ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড হবে।
পর্ণোগ্রাফি আইনের অধীনে সংঘটিত যে কোনো অপরাধের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বা সহায়তাকারী ব্যাক্তি প্রত্যেকেই পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ সালের ধারা ৮ (৭) মতে একই দণ্ড হবে।