বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আইনের ভূমিকা, আইন নয় সচেতনতাই পারে বাল্যবিবাহ রোধ করতে!

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আইনের ভূমিকাঃ বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ সালের আইনের অপরাধ সমুহ আমল যোগ্য এবং জামিন যোগ্য অপরাধ এবং অ-আপোষ যোগ্য একটি অপরাধ। 

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করতে সরকারি কর্মকর্তা এবং স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি গণ বিয়ে বন্ধ বা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। যেমন, উপজেলা পর্যায়ে প্রাথমিক বা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বা সমাজ সেবা কর্মকর্তা বা নির্বাহী কর্মকর্তা বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাল্যবিবাহের তথ্য পাইলে তাৎক্ষণিক বিবাহ বন্ধ বা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। 

বাল্যবিবাহের নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গের শাস্তি (বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আইনের ভূমিকা)

যে কোনো ব্যাক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে বা অন্য কোনো মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে, যদি সরকারি কর্মকর্তা এবং স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি গণ কোনো বাল্য বিবাহের আয়োজন করা হয়েছে বা বাল্যবিবাহ হয়েছে। তাহলে আদালত সেই বাল্য বিবাহের উপর বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ এর ৫ (১) ধারা মতে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারবে। আদালত স্বেচ্ছায় বা অভিযোগকারী ব্যাক্তির আবেদনের উপর ভিত্তি করে ধারা ৫ (১) এর অধীনে প্রদত্ত আদেশ বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ এর ৫ (২) ধারা মতে প্রত্যাহার করতে পারবে। 

যে কোনো ব্যাক্তির বিরুদ্ধে বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ এর ৫ (১) এর অধীনে নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করলে বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ এর ৫ (৩) ধারা মতে অনধিক ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক দশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হইবে এবং অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক মাস কারাদণ্ড হইবে।

এটি পড়ুনঃ   ইভটিজিং করার শাস্তি | ইভটিজিং এর শিকার হলে করণীয়

বাল্যবিবাহের মিথ্যা অভিযোগ করার শাস্তি

যদি কোনো ব্যাক্তি বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ এর ধারা ৫ এর অধীনে মিথ্যা অভিযোগ করলে বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ এর ৬ ধারা মতে অনধিক ছয় মাস কারাদণ্ড অথবা অনধিক ত্রিশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হইবে এবং অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক মাস কারাদণ্ড হইবে।

বাল্যবিবাহে পিতা-মাতাসহ অন্যান্য ব্যাক্তির শাস্তি

বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে পিতা-মাতা বা অভিভাবক অথবা অন্য কোনো ব্যাক্তি, আইনী বা বে আইনি ভাবে কোনো অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যাক্তির উপর দায়িত্ব নিয়ে বাল্যবিবাহ সম্পন্ন করার চেষ্টা বা অনুরূপ কোনো কাজ করলে বা বাল্যবিবাহ সম্পুর্ন করার অনুমতি বা হুকুম করলে বা নিজ অবহেলার কারণে বাল্য বিবাহ টি বন্ধ করতে ব্যার্থ হলে বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ এর ৮ ধারা মতে অনধিক দুই বছর ও নূন্যতম ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হইবে এবং অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও তিন।মাস কারাদণ্ড হইবে।

পড়ুনঃ যৌতুকের মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মামলা করুন

বাল্যবিবাহে সহায়তা করার শাস্তি

যদি কোনো ব্যাক্তি বাল্যবিবাহ সম্পুর্ন করতে সাহায্য করে বা পরিচালনা করে বা যে কোনো ভাবে বাল্যবিবাহ আয়োজন করে। তাহলে বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ এর ৯ ধারা মতে অনধিক দুই বছর ও নূন্যতম ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হইবে এবং অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও তিন মাস কারাদণ্ড হইবে।

বাল্যবিবাহ নিবন্ধকের শাস্তি বা লাইসেন্স বাতিল

যদি কোনো বিবাহ নিবন্ধক বা কাজী সত্য জানা স্বত্বেও বাল্যবিবাহ নিবন্ধন করে। তাহলে বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ এর ১১ ধারা মতে অনধিক দুই বছর ও নূন্যতম ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হইবে এবং অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও তিন মাস কারাদণ্ড হইবে এবং বিবাহ নিবন্ধক বা কাজীর লাইসেন্স বা নিয়োগ পত্র বাতিল হইবে।

এটি পড়ুনঃ   মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে করণীয় কী? - না জানলেই বিপদ, তাই জানুন আজই

বাল্যবিবাহের বয়স প্রমাণের দলিল

বিবাহের জন্য নারী বা পুরুষের বয়স প্রমাণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো জন্ম নিবন্ধন সনদ বা এনআইডি কার্ড বা এসএসসি সার্টিফিকেট বা জেএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট বা পিএসসি সার্টিফিকেট অথবা সমমানের পরীক্ষার সার্টিফিকেট অথবা পাসপোর্ট বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ এর ১২ ধারা মতে আইনগত দলিল হিসেবে গণ্য করা হইবে।

বাল্যবিবাহের ক্ষতিপূরণ প্রদান

বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ এর ধারা ১৩ (১) আইনের অধীনে অর্থদণ্ড থেকে পাওয়া অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত বা যে পক্ষ বাল্যবিবাহে অপ্রাপ্ত বয়স্ক সেই পক্ষ কে ক্ষতিপূরণ দিতে হইবে।

ধারা ১৩ (২) মতে ধারা ১৩ (১) এ যা কিছু থাক না কেনো, এই আইনের ধারা ৭ এর উপ-ধারা (২) এর অধীন জরিমানা থেকে পাওয়া অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে।

বাল্যবিবাহ অপরাধ আমলে নেয়ার সময়সীমা

বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ সালের আইনের যে কোনো অপরাধ সংঘটিত হবার দুই বছরের মধ্যে অভিযোগ করা না হলে আদালত সেই অপরাধ আমলে বা বিচারের জন্য বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ এর ১৮ ধারা মতে গ্রহণ করবে না।

বাল্যবিবাহ করার শাস্তি

যদি কোনো প্রাপ্ত বয়স্ক নারী বা পুরুষ বাল্যবিবাহ করে। তাহলে বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ এর ধারা ৭ (১) মতে অনধিক দুই বছর কারাদণ্ড বা অনধিক এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হইবে এবং অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও তিন মাস কারাদণ্ড হইবে।

যদি কোনো অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারী বা পুরুষ বাল্যবিবাহ করে। তাহলে বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ এর ধারা ৭ (২) মতে অনধিক এক মাসের আটকাদেশ বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় পক্ষের একই শাস্তিযোগ্য হইবে।

দেখুনঃ অস্থায়ী ইনজাংশন এবং চিরস্থায়ী ইনজাংশন

তবে এই আইনে শর্ত থাকে যে, বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ এর ধারা ৮ এর অধীনে কোনো ব্যাক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ বা মামলা করা হলে বা শাস্তি প্রদান করা হলে এমতাবস্থায় অপ্রাপ্ত বয়স্ক নারী বা পুরুষ কে কোনো প্রকার শাস্তি প্রদান করা যাবে না। (সংক্ষিপ্ত বিবরণী)

এটি পড়ুনঃ   যৌতুকের মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মামলা করুন, যৌতুকের মিথ্যা মামলা থেকে বাচার উপায়!

 

WhatsApp Group Join Now
Avatar of Joe Smith
Joe Smith

Hi, I am Joe Smith. I love to share my thoughts on my website, loves to write on various topics according to the trends.

Leave a Comment

Home
Join
Facebook
Search
হারানো Gp সিম বন্ধ করার উপায়, সহজ পদ্ধতি জেনে নিন মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া এবং দিলে করণীয় কী? জানুন স্টোরি থেকে