নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান, ক্লিক করুন:
আত্মরক্ষার ব্যাক্তিগত অধিকার
নিজের জানমাল এবং অন্যের জানমাল রক্ষা করার জন্য আক্রমণকারীর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য যে অধিকার প্রয়োগ করা হয় বা চেষ্টা করা হয়, তাকেই আত্মারক্ষার ব্যাক্তিগত অধিকার বলা হয়। দন্ডবিধি আইনের ৯৯ ধারার বিধি নিষেধ অনুসারে দণ্ডবিধি আইনের ১০০ ধারা মতে দেহ রক্ষা এবং ১০৩ ধারা মতে সম্পত্তি এবং দেহ রক্ষা করার জন্য আক্রমণকারীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটানো যায়। আর এটি অপরাধ নয়।
যে সকল ক্ষেত্রে দেহ আত্নরক্ষা এবং সম্পত্তি রক্ষার জন্য আক্রমণকারীর মৃত্যু ঘটলে তা অপরাধ হবে না তা বিস্তারিত সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
দণ্ডবিধি আইনের ১০০ ধারা
১।কারোর প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে বা আক্রমণ করা হলে, যার ফলে মৃত্যু অনিবার্য বা মৃত্যুই একামাত্র কারন হবে। দেহ আত্নরক্ষা করার জন্য আক্রমণকারীর মৃত্যু ঘটালে তা অপরাধ হবে না।
২। ন্যায় সঙ্গত এমন আক্রমণ করা হলে, যেটি প্রতিহত না করলে বা প্রতিরোধ না করলে, যার কারনে গুরুতর আঘাতের ফলে মৃত্যু অনিবার্য। দেহ আত্নরক্ষা করার জন্য আক্রমণকারীর মৃত্যু ঘটালে তা অপরাধ হবে না।
৩। ধর্ষণ করার উদ্দেশ্যে আঘাত করলে বা আক্রমণ করলে, দেহ আত্নরক্ষা করার জন্য আক্রমণকারীর মৃত্যু ঘটালে তা অপরাধ হবে না।
৪। অস্বাভাবিক কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে আঘাত বা আক্রমণ করলে, নিজ দেহ আত্নরক্ষা করার জন্য আক্রমণকারীর মৃত্যু ঘটালে তা অপরাধ হবে না।।
৫। শিশু অপহরণ বা ব্যাক্তি অপহরণের উদ্দেশ্য আঘাত বা আক্রমণ করলে, ব্যাক্তির দেহ আত্নরক্ষা করার জন্য আক্রমণকারীর মৃত্যু ঘটালে তা অপরাধ হবে না।।
৬। কোনো ব্যাক্তি কে অবৈধ ভাবে বা অন্যায় ভাবে আটক করায়, এমন পরিস্থিতিতে আঘাত বা আক্রমণ করা, এবং তার মনে হয় যে, সে ন্যায়সংগত ভাবে আইনের আশ্রয় নিতে পারবে না। এমতাবস্থায় নিজ দেহ আত্নরক্ষা করার জন্য আক্রমণকারীর মৃত্যু ঘটালে তা অপরাধ হবে না।
যে সকল ক্ষেত্রে সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য আক্রমণকারীর মৃত্যু ঘটলে তা অপরাধ হবে না।
দণ্ডবিধি আইনের ১০৩ ধারা
১। দস্যুতা সংঘটন করলে, সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য আক্রমণকারীর মৃত্যু ঘটালে তা অপরাধ হবে না।।
২। রাত্রিবেলায় ঘর ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করলে বা গৃহে প্রবেশ করলে, এবং আক্রমণকারীর আক্রমণ প্রতিরোধ করতে, সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য আক্রমণকারীর মৃত্যু ঘটালে তা অপরাধ হবে না।।
৩। কোনো বাসগৃহ বা তাবু, যানবাহনে, জাহাজে বা সম্পত্তি সংরক্ষণের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয় এমন স্থানে অগ্নি সংযোগ করে ক্ষতি সাধন করিলে, সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য আক্রমণকারীর মৃত্যু ঘটালে তা অপরাধ হবে না।
৪। বাড়ি বা গৃহে চুরি, ক্ষতি বা অনধিকার গৃহে প্রবেশ যা পরিস্থিতি এমন হয় যে, নিজ ব্যাক্তিগত অধিকার প্রয়োগ না করলে যে কারোর গুরুতর আঘাত বা মৃত্যু অনিবার্য হবে। এমতাবস্থায় দেহ আত্নরক্ষা বা সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য আক্রমণকারীর মৃত্যু ঘটালে তা অপরাধ হবে না।
এছাড়াও দন্ডবিধি আইনের ১০১ ধারা অনুযায়ী দেহ রক্ষা এবং ১০৪ ধারা অনুযায়ী আক্রমণকারীর আক্রমণ কারোর মৃত্যুর আশংকা রয়েছে এমন না হয় তাহলে আক্রমণকারী আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য আক্রমণকারীর মৃত্যু ছাড়া অন্যান্য ক্ষতি সাধন করা যাবে।
এছাড়াও দন্ডবিধি আইনের ১০২ ধারা এবং ১০৫ ধারা অনুযায়ী আক্রমণকারী যতক্ষন পর্যন্ত কোনো ব্যাক্তির জখম বা মৃত্যু ঘটানোর মতো কার্য না করছে ততক্ষন পর্যন্ত আক্রমনকারীর বিরুদ্ধে সম্পত্তি রক্ষার ব্যাক্তিগত অধিকার থাকবে। আক্রমণকারী কোনো ব্যাক্তির জখম বা মৃত্যু ঘটানোর মতো কার্য না করলে সেচ্ছায় বা ইচ্ছাকৃত ভাবে আক্রমনকারীর মৃত্যু ঘটানো যাবে না।
কেবল মাত্র আক্রমনকারী কোনো ব্যাক্তির জখম বা মৃত্যু ঘটানোর মতো চেষ্টা করলে দেহ আত্নরক্ষা বা সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য আক্রমণকারীর মৃত্যু ঘটালে তা অপরাধ হবে না।
দণ্ডবিধি আইনের ৩২০ ধারায় গুরুতর আঘাতের বর্ণনা
শুধু মাত্র নিম্নলিখিত আঘাত সমূহ কে গুরুতর আঘাত বলে গণ্য করা হয়।
১। পুরুষত্বহীন করা বা এমন ক্ষতিসাধন করা।
২। চোখের জ্যোতি বা দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করা।
৩। কানের শ্রবণ শক্তি স্থায়ী ভাবে নষ্ট করা।
৪। শরীরের যে কোনো অঙ্গ বা গ্রন্থির নষ্ট বা ক্ষতি সাধন করা।
৫। শরীরের যে কোনো অঙ্গের বা গ্রন্থির শক্তি সমূহ ধ্বংস করা বা চিরস্থায়ী ক্ষত করা।
৬। মাথা বা মুখমণ্ডল বা চেহারা স্থায়ী ভাবে বিকৃত করা।
৭। শরীরের কোনো অস্থি বা হার ভাঙ্গা ভগ্ন বা স্থানচ্যুত করা।
৮। এমন কোনো আঘাত যার ফলে জীবন সংশয় হতে পারে বা আহত ব্যাক্তি সর্বনিম্ন বিশ দিন পর্যন্ত প্রচণ্ড দৈহিক যন্ত্রণা ভোগ করে, এমন কাজকর্ম করলে তাকে গুরুতর আঘাত বলে গণ্য করা হবে।