নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান, ক্লিক করুন:
ইভটিজিং কি
ইভটিজিং একটি মারাত্মক অপরাধ। ইভটিজিং সংক্রান্ত অপরাধের আইনের শাস্তি বিধান রয়েছে। সাধারণ ভাষার বলা যায় যে, যদি কোনো ব্যাক্তি বা ব্যাক্তিগণ এমন কোনো খারাপ আচার আচরণ বা অশ্লীলতাহানী কার্যকলাপ করে যা যৌনতার ইঙ্গিত করে বা কোনো ব্যাক্তির যৌন-কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে কোনো নারীর অঙ্গ স্পর্শ করে অশ্লীলতাহানি করে তাকে ইভটিজিং বা যৌন-নিপীড়ন বলে।
ইভটিজিং বা যৌন নিপীড়নের কারণ
বর্তমান সমাজে প্রচলিত অসংস্কৃতি বা অশ্লীল সিনেমা, সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সিনেমা, অশ্লীল ভিডিও দেখে যুবক বা কিশোরদের দ্বারা বিভিন্ন পেশার নারীরা ইভটিজিং এর শিকার হয়। এছাড়াও নারীদের আকর্ষণীয় পোশাকের চলাফেরার জন্য ও নারীরা ইভটিজিং বা যৌন নিপীড়নের স্বীকার হয়ে থাকে।
ইভটিজিং বা যৌন নিপীড়ন মারাত্মক অপরাধ
বর্তমান সময়েও ইভটিজিং বা যৌন নিপীড়নের কারণে অনেক নারী আত্মহত্যা করে। এছাড়াও ইভটিজিং বা যৌন নিপীড়নে প্রতিবাদ করায় খুন বা হত্যার ঘটনা ও ঘটে। এছাড়াও এসিড নিক্ষেপ করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতিসাধন করে ভবিষ্যৎ চিরতরের নষ্ট করে দেয়। এই সব প্রতিরোধে বাংলাদেশের আইনে ইভটিজিং বা যৌন নিপীড়ন মারাত্মক অপরাধ।
ইভটিজিং বা যৌন নিপীড়ন কি আলাদা
ইভটিজিং এবং যৌন নিপীড়ন দুটি অপরাধই নারীদের নিয়ে সংঘটিত হয়।এজন্য ইভটিজিং এবং যৌননিপীড়ন দুটি বিষয়ে আলাদা আলাদা আইনে শাস্তির বিধান উল্লেখ রয়েছে।
ইভটিজিং করার শাস্তির বিষয় টি দন্ডবিধি আইনের ৫০৯ ধারা এবং যৌননিপীড়ন করার শাস্তির বিষয় টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী-২০১৮) এর ১০ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে।
ইভিটিজিং হলো কোনো ব্যাক্তি এমন কোনো ভাবে কোনো নারী কে যৌনতা, নগ্নতা বা অশ্লীলতা ইঙ্গিত করে তা ইভটিজিং। এবং যৌন নিপীড়ন হলো কোনো নারীর শরীর স্পর্শ করে যৌনতা বা নগ্নতা বা অশ্লীলতা করা হলে তা যৌন নিপীড়ন।
ইভটিজিং করার শাস্তি
যদি কোনো ব্যাক্তি কোনো নারীর শীলতাহানির উদ্দেশ্যে এমন কোনো কথা বলে সেই নারী যাতে শুনতে পায় বা শব্দ করে বা সেই নারী যাতে দেখতে পায় এমন ভাবে কোনো অঙ্গভঙ্গি করে বা কোনো বস্তু প্রদর্শন করে বা একই ভাবে নারীর গোপনীয়তা অনধিকার লঙ্ঘন করে তাহলে সেই ব্যাক্তির দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ধারা ৫০৯ মতে এক বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের বিনাশ্ৰম কারাদণ্ড বা অর্থ দণ্ড অথবা উভয়বিধ দণ্ড হবে।
যৌননিপীড়ন করার শাস্তি
যদি কোনো ব্যাক্তি অবৈধ ভাবে কোনো নারীর যৌন কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে নারীর শরীরের যে কোনো অঙ্গ বা কোনো বস্তু দ্বারা কোনো নারী বা শিশুর যৌনাঙ্গ বা অন্য কোনো অঙ্গ স্পর্শ করে বা কোনো নারীর শ্লীলতাহানি করে, তাহলে সেই ব্যাক্তির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধনী-২০১৮) এর ধারা ১০ মতে অনধিক দশ বছর কিন্তু অন্যূন তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড হইবে এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ড ও হইবে।
ইভটিজিং এর শিকার হলে করণীয়
১। ইভটিজিংয়ের শিকার নিকটস্থ বা সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি বা অভিযোগ করবেন। তবে সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করার সময় জিডির দুই টি কপি থানায় পুলিশ ডিউটি অফিসার কে দিবেন। এরপর পুলিশ ডিউটি অফিসারের স্বাক্ষর ও সিলমোহর, জিডি নং তারিখ সহ জিডির এক কপি সংরক্ষণ আপনাকে ফেরত দিবেন। সাধারণ ডায়েরি বা জিডি নং ও তারিখ না থাকলে সেই সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করার আইনগত মূল্য থাকে না।
২। থানায় মামলা না নিলে সংশ্লিষ্ট আদালতে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে ইভটিজিং এর জন্য মামলা করতে পারেন।
৩। ইভটিজিং কারীরা টাকাওয়ালা প্রভাবশালী বা খারাপ প্রকৃতির হয়ে থাকে। এজন্য ভুক্তভোগীদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাড়ায়। আদালতে বা থানায় মামলা করে ব্যার্থ হলে সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন। এর কারণে আপনি আইনগত কোনো মূল্য না পেলেও নিরাপত্তা নিয়ে প্রাণনাশের মত ঘটনা না ঘটার সম্ভাবনা থাকে না। কারণ ঘটনা টা জানাজানি হলে অপরাধীরা বিচলিত বা আতংকের মধ্যে থাকে।
ইভটিজিং প্রতিরোধে করণীয়
বর্তমান সমাজে ইভটিজিং মারাত্মক মহামারির মতো সমস্যা হয়ে পড়েছে। এমন কি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, অন্যান্য পেশায়ও রাস্তাঘাটে মেয়ে বা নারীরা ইভটিজিং এর শিকার হচ্ছে।
১। নিজ এলাকায় ইভটিজিং প্রতিরোধক কমিটি গঠন ও সভা আয়োজন করতে হবে।
২। নিজ এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের মাধ্যমে স্থানীয় থানা কর্তৃক ইভটিজিংকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সহযোগিতা করতে হবে।
৩। নারীদের রাস্তাঘাটে ইভটিজিং করলে খুব দ্রুতই নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি বা অভিযোগ করুন।
৪। ইভটিজিং প্রতিরোধে নারীদের ধর্মীয় অনুশাসন মেনে পর্দা করে চলাফেরা করা উচিত।
৫। রাস্তাঘাটে, স্কুল, কলেজে বা যে কোনো স্থানে ইভটিজিং এর স্বীকার হলে জরুরি সেবা পেতে ৯৯৯ এ কল করে বিস্তারিত জানাতে পারেন, এবং নিকটস্থ থানা থেকে আইনী পদক্ষেপ নিবেন।