বাংলাদেশ নারী ও শিশু নির্যাতন আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ

আজকের আলোচ বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশ নারী ও শিশু নির্যাতন আইন নিয়ে। এই লেখাইয় আমরা নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কিভাবে করা যায় সে সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করব।

নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান, ক্লিক করুন:

নারী ও শিশু অপহরণের শাস্তি (বাংলাদেশ নারী ও শিশু নির্যাতন আইন)

যদি কোনো ব্যাক্তি যে কোনো উদ্দেশ্যে কোনো নারী বা শিশুকে অপহরণ করে। তবে সেই ব্যাক্তির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সালের ৭ ধারা মতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা নূন্যতম চৌদ্দ বৎসর সশ্রম কারাদণ্ড বা অতিরিক্ত অর্থদণ্ড হবে।

মুক্তিপণ আদায়ের শাস্তি 

যদি কোনো ব্যাক্তি মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে কোনো নারী বা শিশুকে অপহরণ বা আটক করে। তবে সেই ব্যাক্তির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সালের ৮ ধারা মতে মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ড হবে।

ধর্ষণ জনিত কারণে মৃত্যুর শাস্তি 

যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশু কে ধর্ষণ করে। তবে সেই ব্যাক্তির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সালের ৯(১) ধারা মতে মৃত্যুদণ্ডে অথবা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ড হবে।

যদি কোনো পুরুষ বিবাহ ছাড়া ষোল বছরের অধিক বয়সী কোনো নারীর সাথে অনুমতি ছাড়া বা ভয় দেখিয়ে বা প্রতারণা মূলক ভাবে যৌন সঙ্গম করে। অথবা ষোল বছরের কম বয়সী কোনো নারীর সাথে অনুমতি সহ বা অনুমতি ছাড়া যৌন সঙ্গম করে। তাহলে সেই সেই ব্যাক্তি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করেছে বলে গণ্য হবে।

যদি কোনো ব্যাক্তির দ্বারা ধর্ষণের ফলে ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু হয়। অথবা একাধিক ব্যাক্তি দলবদ্ধ ভাবে কোনো নারী বা শিশু কে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের কারণে কোনো নারী বা শিশুর মৃত্যু হয় বা আহত হয়। তবে সেই ব্যাক্তির মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং অতিরিক্ত নূন্যতম এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড হবে।

এটি পড়ুনঃ   কেউ মিথ্যা জিডি করলে! মিথ্যা জিডি হলে করণীয় কী?

ধর্ষণ চেষ্টার শাস্তি 

যদি কোনো ব্যাক্তি ধর্ষণের চেষ্টা করে। তাহলে সেই ব্যাক্তির অনধিক দশ বছর এবং নূন্যতম পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ড হবে।

পুলিশ হেফাজতে ধর্ষণের শাস্তি 

যদি কোনো নারী পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে ধর্ষণের শিকার হয়। তাহলে যার হেফাজতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলো, সেই ব্যাক্তি হেফাজতের ব্যর্থতার জন্য অনধিক দশ বছর বা নূন্যতম পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং অতিরিক্ত নূন্যতম দশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড হবে।

নারীর আত্মহত্যায় প্ররোচনার শাস্তি

যদি কোনো নারীর অনুমতি ছাড়া বা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো ব্যাক্তির ইচ্ছাকৃত কোনো কাজের দ্বারা মানহানি বা সম্ভ্রমহানি হয়েছে এমন প্রত্যক্ষ কারণে কোনো নারী আত্মহত্যা করলে উক্ত ব্যাক্তি  উক্ত নারী কে অনুরূপ কাজ দ্বারা আত্মহত্যা করতে প্ররোচিত করার অপরাধে অপরাধী হবে। এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সালের ৯(ক) ধারা মতে অপরাধের জন্য অনধিক দশ বছর বা নূন্যতম পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ড হবে। 

যৌন পীড়নের শাস্তি  

যদি কোনো ব্যাক্তি অবৈধ ভাবে নারী বা শিশুর যৌন কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে নারী বা শিশুর শরীরের যে কোনো অঙ্গ বা কোনো বস্তু দ্বারা কোনো নারী বা শিশুর যৌন অঙ্গ বা অন্য কোনো অঙ্গ স্পর্শ করে বা কোনো নারীর অশ্লীলতাহানি করে। তাহলে সেই ব্যাক্তির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সালের ১০ ধারা মতে অনধিক দশ বছর বা নূন্যতম তিন বৎসর সশ্রম কারাদণ্ড এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ড হবে।

যৌতুকের জন্য মৃত্যু ঘটানোর শাস্তি 

যদি কোনো নারীর স্বামী বা স্বামীর পিতা, মাতা,অভিভাবক,আত্মীয় বা স্বামীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যাক্তি যৌতুকের জন্য কোনো নারীর মৃত্যু ঘটায় বা মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা করে বা ঐ নারী কে আহত বা মারাত্মক জখম করে। সেই সব ব্যাক্তির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সালের ১১(ক) ধারা মতে মৃত্যু বা মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা করার জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং উভয় ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থদণ্ড হবে।

এটি পড়ুনঃ   যৌতুকের মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মামলা করুন, যৌতুকের মিথ্যা মামলা থেকে বাচার উপায়!

যদি মারাত্মক আহত বা জখম করে তাহলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সালের ১১(খ) ধারা মতে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক বারো বছর বা নূন্যতম পাঁচ বছর  সশ্রম কারাদণ্ড এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ড হবে। যদি সাধারণ জখম করে তাহলে  অনধিক তিন বছর বা নূন্যতম এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ড হবে।

ভিক্ষাবৃত্তি বা অনুরূপ উদ্দেশ্যে শিশুকে অঙ্গহানি করার শাস্তি 

যদি কোনো ব্যাক্তি ভিক্ষাবৃত্তি বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির উদ্দেশ্যে কোনো শিশুর কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিনষ্ট করে বা অন্য কোনো ভাবে বিকলাঙ্গ বা বিকৃত করে। তাহলে সেই ব্যাক্তি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সালের ১২ ধারা মতে, মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ড হবে।

ধর্ষণের ফলে শিশু জন্ম লাভ সংক্রান্ত বিধান 

ধর্ষণের কারণে কোনো সন্তান জন্ম লাভ করলে উক্ত সন্তান কে তার মাতা বা মাতৃকালীন আত্মীয় স্বজনের দায়িত্বে রাখা যাবে। এবং উক্ত সন্তান তার পিতা-মাতা উভয়ের পরিচয়ে পরিচিত পাবার অধিকারী হবে।এবং উক্ত সন্তানের ভরণপোষণের সকল ব্যয় রাষ্ট্র পক্ষবহণ করবে। এছাড়াও উক্ত সন্তানের একুশ বছর না হওয়া পর্যন্ত ভরণপোষণের ব্যয় পাইবে। তবে কন্যা সন্তানের ক্ষেত্রে একুশ বছরের অধিক বয়স হলেও বিবাহ না হওয়া পর্যন্ত ভরনপোষণ পাবেন এবং পঙ্গু সন্তানের ক্ষেত্রে স্থায়ী ভরণপোষণের যোগ্যতা অর্জন না করা পর্যন্ত বহাল থাকবে।এবং উক্ত সন্তানের ভরণপোষণ বাবদ অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করা থাকবে

আরও উল্লেখ থাকে যে, অনুরূপ কোনো সন্তানের ভরণপোষণের জন্য অর্থ রাষ্ট্র পক্ষ ধর্ষকের নিকট থেকে আদায় করতে পারবে এবং ধর্ষকের বর্তমান সম্পদ থেকে  অর্থ আদায় করা সম্ভব না হলে, ভবিষ্যতে ধর্ষক যে সম্পদের মালিক হবে। সেই সম্পদ থেকে উক্ত অর্থ আদায় করতে পারবেন বা আদায় যোগ্য হবে।

সংবাদ মাধ্যমে নির্যাতিতা নারী ও শিশুর পরিচয় প্রকাশের শাস্তি 

কোনো নারী বা শিশু নির্যাতনের অপরাধের শিকার হলে কোনো সংবাদপত্রে বা সংবাদ মাধ্যমে উক্ত নারী বা শিশুর পরিচয় প্রকাশ না পায়, এমন ভাবে প্রকাশ বা পরিবেশন করা যাবে। 

উক্ত বিধান লংঘন করলে,নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সালের ১৪(২) ধারা মতে লংঘনের জন্য সকল দায়ী ব্যাক্তিদের অনধিক দুই বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হবে।

এটি পড়ুনঃ   ইভটিজিং করার শাস্তি | ইভটিজিং এর শিকার হলে করণীয়

মিথ্যা মামলা, অভিযোগ দায়েরর শাস্তি 

যদি কোনো ব্যাক্তি অন্য কোনো ব্যাক্তির ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে অন্য কোনো ব্যাক্তির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু ট্রাইবুনাল আইনের অন্য যে কোনো ধারার অধীনে মামলা বা অভিযোগ করেন এবং আইনানুগ কোনো কারণ নাই তা জানা স্বত্বেও মামলা বা অভিযোগ করেন বা করায় তাহলে মামলা বা অভিযোগ কারী ব্যাক্তি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সালের ১৭(১) ধারা মতে অনধিক সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ড হবে। উপরোক্ত অপরাধের পরিপ্রেক্ষিতে নারী ও শিশু ট্রাইবুনাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সালের ১৭(২) ধারা মতে কোনো ব্যাক্তির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে উক্ত অপরাধের অভিযোগ গ্রহণ করতে পারবেন এবং মামলার বিচার করতে পারবেন।

সাক্ষীর উপস্থিতি 

নারী ও শিশু ট্রাইবুনাল কোনো অপরাধের বিচারের কাজের জন্য সাক্ষীর সমন জারী বা গ্রেফতারী ওয়ারেন্ট কার্যকর করার জন্য সাক্ষীদের সর্বশেষ বসবাসের ঠিকানা অর্থাৎ যে থানায় বসবাস করেন। সেই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর সাক্ষীর সমন জারী বা গ্রেফতারী ওয়ারেন্ট প্রেরণ করবেন এবং সাক্ষীদের উল্লেখিত ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত করার দায়িত্ব ঐ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উপর থাকিবে।

এছাড়াও সাক্ষীদের সমন জারীর একটি অনুলিপি কপি সাক্ষীকে এবং জেলা পুলিশ সুপার অথবা ক্ষেত্রমতে পুলিশ কমিশনার কে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র পত্র সহ নিবন্ধিত কপি ডাকযোগে প্রেরণ করা হবে। এবং ট্রাইব্যুনালের আদেশের কোনো সমন জারী বা ওয়ারেন্ট কার্যকর করতে পুলিশ কর্মকর্তা ইচ্ছাকৃত অবহেলা করলে ট্রাইব্যুনাল পুলিশ কর্মকর্তাকে অদক্ষতা হিসেবে চিহ্নিত করবেন এবং পুলিশ কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের নিকট  ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ প্রদান করতে পারবেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন আইন- আপীল 

নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক আদেশ বা রায় বা আরোপিত সাজা প্রাপ্ত পক্ষ, উক্ত আদেশ বা রায় বা সাজার বিরুদ্ধে রায় বা আদেশ প্রদানের তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে উক্ত আদেশ বা রায় বা সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে আপীল করতে পারবেন।

নারী ও শিশু ট্রাইবুনাল – মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন 

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ সালের ২৯ ধারা মতে নারী ও শিশু আইনে কোনো ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড সাজা দিলে ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৭৪ ধারার বিধান অনুযায়ী ঐ মামলার নথিপত্র হাইকোর্ট বিভাগে প্রেরণ করবেন এবং হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন ব্যতীত মৃতুদণ্ড কার্যকর করতে পারবেন না। 

অপরাধে প্ররোচনা বা সহায়তার শাস্তি 

যদি কোনো ব্যাক্তি নারী ও শিশু ট্রাইবুনাল আইনের অধীনে কোনো অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করে এবং সেই প্ররোচনার বা সহায়তার ফলে উক্ত অপরাধ ঘটে বা অপরাধ করার চেষ্টা করে তাহলে নারী ও শিশু দমন আইন ২০০০ সালের ৩০ ধারা মতে ঐ অপরাধ টি ঘটানোর জন্য বা অপরাধ টি ঘটানোর চেষ্টা করার জন্য নির্ধারিত যে কোনো দণ্ডে প্ররোচনাকারী বা সহায়তাকারী ব্যাক্তি দণ্ডনীয় হবে

WhatsApp Group Join Now
Avatar of Joe Smith
Joe Smith

Hi, I am Joe Smith. I love to share my thoughts on my website, loves to write on various topics according to the trends.

Leave a Comment

Home
Join
Facebook
Search
হারানো Gp সিম বন্ধ করার উপায়, সহজ পদ্ধতি জেনে নিন মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া এবং দিলে করণীয় কী? জানুন স্টোরি থেকে