আজ আমরা সরকারি খরচে আইনী সহায়তা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণী জানবো। অর্থাৎ এই সরকারি আইনী সহায়তা কে পাবে বা কারা পাবে অথবা কোথা থেকে পাবে এবং কি কি আইনী সহায়তা পাবে।
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় বিচার বিভাগের একটি লিগ্যাল এইড অফিস নামে একটি অফিস রয়েছে যা কেবল মাত্র অসহায় গরিবের জন্য সরকারি খরচে আইনী সহায়তা দিয়ে থাকে।
নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান, ক্লিক করুন:
সরকারি খরচে আইনী সহায়তা কারা পাবে?
বাংলাদেশের নাগরিক এবং স্থায়ী বাসিন্দা, গরিব, অসহায়, যাদের বছরে ১০০,০০০/= (এক লক্ষ) টাকার কম আয় বা এক লক্ষ টাকার বেশি আয় নয়। কেবল মাত্র তারাই বাংলাদেশের জেলা পর্যায়ের বিচার বিভাগের লিগ্যাল এইড অফিস থেকে বিনামূল্যে আইনী সহায়তা পাবেন।
সরকারি খরচে কি কি সহায়তা পাবে?
বাংলাদেশের জেলা পর্যায়ের লিগ্যাল এইড অফিস থেকে বিনামূল্যে প্যানেল আইনজীবীর নিকট থেকে আইনগত তথ্য ও পরামর্শ নিতে পারবেন। এছাড়াও সরকারি খরচে মামলার বাদী বা ফরিয়াদি বা অভিযোগকারী অথবা অভিযুক্ত ব্যাক্তির পক্ষে একজন প্যানেল আইনজীবী নিয়োগ এর মাধ্যমে মামলা পরিচালনা করতে পারবেন। এছাড়াও আসামি হাজিরার জন্য পেপার বিজ্ঞপ্তি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহের বিষয়ে তথ্য ও পরামর্শ নিতে পারবেন। জেল হাজতে বা কারাগারে আবদ্ধ আসামি আবেদন করে একজন প্যানেল আইনজীবী সহ মামলার প্রয়োজনীয় নকল সহ DNA টেস্ট এর খরচ সহ পেতে পারেন।
হাজতি আসামিদের সরকারি আইন সহায়তা পাওয়ার উপায়।
জেল বা কারাগারে হাজতি ব্যাক্তির যে কোনো ধরনের ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হলেও তাহার পক্ষে কোনো আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া না থাকলে জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে লিগ্যাল এইড অফিসে আইন সহায়তার জন্য আবেদন করে একজন প্যানেল আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে মামলা পরিচালনা করতে পারবেন। এবং কারাগার কর্তৃপক্ষ আসামির নাম,আসামির পিতার নাম, হাজতি নাম্বার এবং মামলা নাম্বার সহ কোনো আইনে, কোন আদালতে মামলা চলমান আছে এই সব তথ্য লিগ্যাল এইড অফিসে পাঠাবেন। নিযুক্ত আইনজীবী লিগ্যাল এইড অফিসের সহায়তা নিয়ে এজাহার বা নালিশী দরখাস্ত বা চালান বা ফরওয়ার্ডিং, প্রতিবেদন বা পুলিশ রিপোর্ট বা জব্দ তালিকা মেডিকেল সাটিফিকেট বা আগের আদেশের কপি সহ জাবেদা নকল অথবা মিস কেসের ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জাবেদা নকল কপি সংগ্রহ করতে পারবেন। এছাড়াও হাজতি আসামির আত্নীয় স্বজন মামলার তদ্বিরকারী হিসেবে নিযুক্ত আইনজীবী এবং লিগ্যাল এইড অফিস থেকে মামলা সংক্রান্ত তথ্য নিতে পারবেন।
ফৌজদারী মামলায় কি কি কাগজপত্র লাগে?
ফৌজদারি মামলায় মামলার ধরণের উপর নির্ভর করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে। যেমন ধর্ষণ বা মারপিট মামলার ক্ষেত্রে সরকার অনুমোদিত হসপিটাল হতে সরকার অনুমোদিত কোনো ডাক্তারের মেডিকেল সাটিফিকেট। প্রতারণা মামলার ক্ষেত্রে জাল দলিল বা জাল সনদ, অবৈধ বায়নানামা বা অঙ্গীকারনামা লাগবে। মানহানি মামলার ক্ষেত্রে কোনো প্রকাশনা প্রমাণ, যেমনঃ- পেপার পত্রিকা, ভিডিও, পোস্টার অথবা অন্যান্য প্রমাণ, যাহার দ্বারা মানহানি হয়েছে। এছাড়াও যৌতুকের মামলার ক্ষেত্রে কাবিননামা বা নির্যাতন হলে সরকার অনুমোদিত হসপিটাল হতে সরকার অনুমোদিত কোনো ডাক্তারের মেডিকেল সাটিফিকেট। এছাড়াও মামলার ধরণ যদি খুন বা আঘাত বা ধর্ষণ বা আত্নহত্যার চেষ্টার হয় তাহলে ফরেনসিক রিপোর্ট এবং ময়না তদন্ত রিপোর্ট ও সুরতহাল রিপোর্ট লাগবে।
সরকারি খরচে আইনী সহায়তার জন্য কি কি কাগজপত্র লাগবে?
যদি জমিজমা সংক্রান্ত মামলা হয় তাহলে সিএস খতিয়ান, আরএস খতিয়ান, এসএ খতিয়ান লাগবে। এছাড়াও খাজনার রশিদ বা Duplicate Carbon Recite – DCR সহ খারিজের কাগজ পত্র এবং দলিল এর মূলকপি বা জাবেদা কপি লাগবে। এছাড়াও জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্ম সনদ লাগবে।
পারিবারিক মামলায় কি কি কাগজপত্র লাগে?
পারিবারিক মামলা মোকদ্দমায় কাবিন নামা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বা জরুরি। যদি পারিবারিক বিষয় তালাক হয় তাহলে তালাক নামা লাগবে। জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা জন্ম সনদ। এছাড়াও বাচ্চা থাকলে বাচ্চার টিকা বা জন্ম নিবন্ধন কার্ড লাগতে পারে। একটি স্ত্রী থাকার পরও প্রথম স্ত্রী কে না জানিয়ে ২য় বিয়ে করলে ২য় বিয়ের কাবিন নামা লাগবে।
ফৌজদারী বা নারীও শিশু নির্যাতন মামলার ক্ষেত্রে কি কি কাগজপত্র লাগে?
নারী ও শিশু ট্রাইবুনালে মামলা করতে মেডিকেল সার্টিফিকেট সহ অন্যান্য কাগজপত্র লাগবে। এছাড়াও জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা জন্ম সনদ গুরুত্বপূর্ণ বা খুবই জরুরি।