আপনার বিরুদ্ধে কেউ মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে আপনি কি করবেন? এটাই আপনার মনের প্রশ্ন! তবে আমাদের সর্বপ্রথম জানা দরকার যে, মিথ্যা সাক্ষ্য কি?
নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান, ক্লিক করুন:
মিথ্যা সাক্ষ্য কি?
যে কোনো ব্যাক্তি, অন্য যে কোনো ব্যাক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে পারে। কেউ কারোর বিপক্ষে সত্য গোপন করে, এমন কিছু প্রকাশ করেছে বা প্রচার করেছে। যা ঐ প্রকাশ্যে পর বা প্রচারের পর যে ব্যাক্তির বিপক্ষে প্রকাশ করেছে বা প্রচার করেছে তাহার কোনো রূপ আইনত অপরাধ। অথবা ঐ ব্যাক্তির অর্থ দন্ড বা যাবতজীবন অথবা মৃত্যু দন্ড হতে পারতো বা হবে অথবা হয়েছে।
এছাড়াও আরও সহজ ভাষায় বলতে পারি যে, কোনো ব্যাক্তি সত্য ঘটনা কে, সত্য বলিয়া জানা স্বত্বেও তা শপথ করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকে বা মিথ্যা কে সত্য বলিয়া বিশ্বাস করেন এবং সত্য বলে সাক্ষী দেন। মূল কথা হলো কোনো ব্যাক্তি সত্য কিছু সত্যি বলে সানা স্বত্বেও শপথ করে মিথ্যা বলে, তবে সেই ব্যাক্তি মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে বলে বিবেচনা করা হবে।
মিথ্যা সাক্ষ্য তৈরি করার অপরাধ
কারোর সাথে কোনো প্রকার পূর্ব শত্রুতা থাকলে বা কোনো প্রতিশোধের নেশায় বা কোনো ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে, কারোর বিরুদ্ধে কোনো কাগজে বা রেকর্ডে মিথ্যা কথা লিপিবদ্ধ করে মিথ্যা সাক্ষ্য তৈরি করা হয়। এবং যদি তাহা বিচার বিভাগে/আদালতে অথবা কোনো সালিসি বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে। অথবা একই ভাবে মিথ্যা দলিল বা মিথ্যা বিবৃতি তৈরি করে, যার উপর ভিত্তি করে কারোর ক্ষতিসাধন করা সম্ভব বা ক্ষতি করা হয়েছে। অনুরূপ কোনো সত্য বলে মত পোষণ করে তবেই ব্যাক্তি মিথ্যা সাক্ষ্য তৈরি করেছে বলে বিবেচনা করা হবে।
অথবা আদালতে সাক্ষ্য উপস্থাপন করার জন্য কোথাও মিথ্যা কিছু লিপিবদ্ধ করে, তবে সেই ব্যাক্তি মিথ্যা সাক্ষ্য তৈরি করেছে।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, প্রথম ব্যাক্তি দ্বিতীয় কোনো ব্যাক্তির ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে কোনো বস্তু প্রথম ব্যাক্তি দ্বিতীয় ব্যাক্তির গোপন কোনো জায়গায় রেখে আসে এবং তল্লাশি করে দ্বিতীয় ব্যাক্তির কাছে ঐ বস্তু পাওয়া যায়। তবে প্রথম ব্যাক্তি এই মিথ্যা সাক্ষ্য তৈরি করেছেন।
মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার শাস্তি
যদি কোনো ব্যাক্তি আদালতের কার্যক্রমে যে কোনো পর্যায়ে নিজের ইচ্ছাপূর্বক সত্য ঘটনা বা সত্য কিছু গোপন করে, সত্য কিছু জানা স্বত্বেও মিথ্যা তৈরি করে। তবে সেই ব্যাক্তির দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ১৯৩ ধারা মতে সাত বছর পর্যন্ত সাজা হবে।
একই ভাবে কোনো ব্যাক্তি অন্য কোনো ক্ষেত্রে বা সালিসি বৈঠকে নিজের ইচ্ছা পূর্বক মিথ্যা সাক্ষ্য দেন বা মিথ্যা সাক্ষ্য তৈরি করেন। তবে সেই ব্যাক্তির দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ১৯৩ ধারা মতে তিন বছর পর্যন্ত সাজা হবে।
এছাড়াও কোনো ব্যাক্তি কে মৃত্যু দন্ড সাজা হবে এমন উদ্দেশ্যে কেউ মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় বা মিথ্যা সাক্ষ্য তৈরি করেন। অথবা এই রকম মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া বা মিথ্যা সাক্ষ্য তৈরি করার ফলে কারোর মৃত্যু দন্ড সাজা হতে পারে বা সাজা হয়েছে। তবে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া বা মিথ্যা সাক্ষ্য তৈরি করা ব্যাক্তির দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ১৯৪ ধারা মতে যাবজ্জীবন বা দশ বছর পর্যন্ত সাজা হবে।
মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে করণীয় কী
আপনার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে সর্বপ্রথম সত্য ঘটনা কে তুলে ধরতে হবে। কেউ মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে, ঐ ঘটনার সত্য ঘটনার যথাযথ সাক্ষ্য প্রমাণ থাকতে হবে। যে সাক্ষ্য দিয়েছে ঐ ব্যাক্তি ঐ ঘটনা সম্পর্কে জানে বা জানে না অথবা কতটুকু জানে অথবা কি কি জানে এবং ঐ বিষয়ে আরও সাক্ষী বা প্রমাণ থাকা দরকার। অর্থাৎ যে ব্যাক্তিকে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে বলে মান্য করা হচ্ছে। ঐ বাক্তির সাক্ষ্যের পরিপ্রেক্ষিতে সত্য ঘটনার সাক্ষ্য প্রমাণ দিয়ে সত্য কে সামনে তুলে ধরতে হবে। আপনি চাইলে মিথ্যা সাক্ষ্য দাতার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন। তবে মনে রাখবেন আইনী কার্যক্রমে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নিবেন (সংক্ষিপ্ত বিবরণী)